বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন
শতবর্ষ আগে পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে নিমজ্জিত বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে মুক্তির প্রভাকর রূপে জন্ম নেয়া ‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি শিক্ষা-দীক্ষা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, মহত্তম জীবনবোধ সততা, সাহস, দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ নামক স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্রের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। যে ইতিহাস রচনা করেছে হাজার বছরের শৃঙ্খল মোচনের এক অমর মহাকাব্য।তিনি প্রজ্বলিত এক নক্ষত্র, অগনিত মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক প্রস্ফুটিত গোলাপ। বাঙালি বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন-তার আত্মপরিচয়ের ঠিকানা, অহঙ্কারের সাতকাহন, আত্ম মর্যাদার প্রতীক-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু বাঙালির চেতনার রাজ্যে মুকুটহীন রাজা, অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধিকার আন্দোলনের সাথে জ্বলজ্বলমান যে নামটি, তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ২৩ বছরের গোলামির জিঞ্জির ভেঙে তার ডাকেই ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছিল দুর্গ। হাজার হাজার মাইল দূরের পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থেকেও তিনি ছিলেন মুক্তিসেনাদের ট্রেনিং ক্যাম্প আর শরণার্থীদের রিফিউজি ক্যাম্পের মানুষগুলোর হূদয় মাঝে ভাস্বর হয়ে। তার নামেই উজ্জীবিত হয়ে জীবন বাজি রেখে এক মুহূর্তের জন্যও কুণ্ঠিত হয়নি বাঙালি। বঙ্গবন্ধুকে যত বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায় তার মধ্যে অসামপ্রদায়িক সাম্যবাদী বঙ্গবন্ধু অন্যতম।
একজন মানুষ-কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী যা-ই হোন না কেন, তিনি যদি বর্ণবাদী কিংবা সামপ্রদায়িক হন তাহলে কোনো ক্রমেই তিনি পরিপূর্ণ একজন মানুষ কিংবা প্রকৃত যৌক্তিক কোনো মানুষ হতে পারেন না।সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে অর্থেও পরিপূর্ণ, যৌক্তিক অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় অসামপ্রদায়িক মহামানব। যত বড় বড় মহান মানুষ ও রাষ্ট্রনায়কের নাম পৃথিবীর ইতিহাসে রয়েছে যেমন-রুজভেল্ট, উইনস্টন চার্চিল, মহাত্মা গান্ধী, জওয়াহেরলাল নেহরু, বন্দরনায়েক তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটি বড় তফাৎ রয়েছে। সেটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু অসামপ্রদায়িক একটি রাষ্ট্র (বাংলাদেশ) সৃষ্টি করেছেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান চেয়েছিলেন, কিন্তু দ্বিজাতিতত্ত্ব চাননি। তিনি মনেপ্রাণে, কাজেকর্মে ঘৃণা করতেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে রাজনীতি, সমাজনীতি ও সব ধরনের কুসংস্কারকে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদি ইত্যাদি জাত-পাত বিদ্বেষের ঊর্ধ্বের মানস কবি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়, ১৯৪৬ সালের আগস্টে কলকাতার ভয়াবহ সামপ্রদায়িক দাঙ্গায় বহু মানুষ নিহত-আহত যখন হয়েছিল, যত্রতত্র মৃতদেহ আর পোড়া বাড়িঘর দেখে তার মনে হয়েছিল মানুষ আর মানবতা পশুতে পরিণত হয়েছে। তিনি সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপদ্রুত অঞ্চল থেকে অসহায় হিন্দু-মুসলমানদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। ১৯৬৪ সালে পাকি শাসকদের মদদে পূর্ব বাংলার তৎকালীন ঢাকায় যে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা হয়, তখনকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার পাশে রেললাইনে ট্রেন থামিয়ে সংখ্যালঘু যাত্রীদের হত্যা করা হয়েছিল। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢাকা শহরের সংখ্যালঘু কয়েকটি পরিবারকে নিজের বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন।
আর আমাদের বঙ্গমাতা বেগম মুজিব পরম যত্নে আদরে তাদের খাবার, শোবার ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি যে বিরাট এক অসামপ্রদায়িক মানুষ ছিলেন তার বড় প্রমাণ আওয়ামী মুসলিম লীগ বাদ দিয়ে তার দলের নাম করলেন আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাইকে ভাই ভাই বলে উল্লেখ করেছেন। ৭ মার্চের ভাষণও বঙ্গবন্ধুর অসামপ্রদায়িক চেতনার দলিল। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জাতি-উপজাতি, চাকমা, মারমা নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধুর চেতনা-আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে মানবতার মহামন্ত্রে লালিত হয়ে বিষাক্ত সামপ্রদায়িক পশ্চিম পাকিস্তানি ধর্মান্ধ গোঁড়া বিবেকহীন নরপিশাচ কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র নিরীহ পূর্ববাংলার সাধারণ কৃষক শ্রমিক, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, সাধারণ মানুষ আত্মরক্ষার্থে মুক্তির প্রত্যাশায় দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে জীবন-প্রাণ উৎসর্গ করে একটি অসামপ্রদায়িক দেশ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে। স্বাধীনতা সংগ্রামের পথিকৃৎ এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষকে আদেশ দিয়েছিলেন। তার সাথে সাথে অনুরোধও করেছিলেন এদেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সুখে বাস করবে, পাশাপাশি বাস করবে। ভাই ভাই হয়ে বাস করবে। কোনো ধরনের সামপ্রদায়িকতা বাংলার মাটিতে যেনো না হয়-তাহলে আমি তা সহ্য করবো না।সারাজীবন ভরে আমি সংগ্রাম করেছি এদেশের সবার জন্য। মুসলমান ভাইয়েরা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সমস্ত মানুষের খোদা, কোনো সমপ্রদায়ের খোদা তিনি নন, তাই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো, সামপ্রদায়িকতার বীজ যেনো বাংলার মাটিতে কেউ বপন না করে, তাহলে ৩০ লাখ যে শহীদ হয়েছে তাদের আত্মা শান্তি পাবেনা।